বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু: ইসরায়েলি রাজনীতির দীর্ঘতম সময়ের প্রধানমন্ত্রী

a flag hanging from a building in a city

ভূমিকা

বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু (Benjamin Netanyahu) ইসরায়েলের রাজনীতিতে এক অত্যন্ত প্রভাবশালী এবং বিতর্কিত ব্যক্তিত্ব। কয়েক দশক ধরে তিনি ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন এবং ইসরায়েলি নীতি, নিরাপত্তা ব্যবস্থা ও আন্তর্জাতিক সম্পর্ক গঠনে বড় ভূমিকা রেখেছেন। সমর্থকরা তাকে শক্তিশালী নেতৃত্বের প্রতীক মনে করলেও, সমালোচকরা অভিযোগ তোলেন তার নীতি প্রায়শই সংঘাত ও বিভাজন বাড়ায়। এই ব্লগে আমরা নেতানিয়াহুর রাজনৈতিক জীবন, সাফল্য, বিতর্ক এবং প্রভাব নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করব।

শৈশব ও শিক্ষাজীবন

নেতানিয়াহুর জন্ম ১৯৪৯ সালের ২১ অক্টোবর তেল আভিভে। তার পরিবার ছিল গভীরভাবে শিক্ষিত ও রাজনৈতিকভাবে সক্রিয়। শৈশবে তিনি যুক্তরাষ্ট্রে কিছু সময় কাটান, যেখানে স্কুল ও কলেজে পড়াশোনা করেন। ম্যাসাচুসেটস ইন্সটিটিউট অব টেকনোলজি (MIT) থেকে তিনি আর্কিটেকচার এবং ম্যানেজমেন্টে ডিগ্রি অর্জন করেন। শিক্ষাজীবনেই তিনি যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলের মধ্যকার কূটনৈতিক সম্পর্ক নিয়ে আগ্রহী হয়ে ওঠেন।

সামরিক ক্যারিয়ার

নেতানিয়াহু ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনীর একটি বিশেষ ইউনিটে (Sayeret Matkal) সৈনিক হিসেবে কাজ করেন। তিনি একাধিক সামরিক অভিযানে অংশ নেন, যার মধ্যে ১৯৭২ সালের স্যাবেনা বিমান ছিনতাই মুক্ত করার অভিযান উল্লেখযোগ্য। সামরিক জীবনের অভিজ্ঞতা পরবর্তীতে তার রাজনৈতিক ভাবনায় গভীর প্রভাব ফেলে এবং তাকে নিরাপত্তা বিষয়ক কঠোর অবস্থান নিতে উদ্বুদ্ধ করে।

রাজনৈতিক জীবনের শুরু

১৯৮০-এর দশকে কূটনৈতিক দায়িত্ব পালনের মাধ্যমে নেতানিয়াহুর রাজনৈতিক যাত্রা শুরু হয়। তিনি জাতিসংঘে ইসরায়েলের স্থায়ী প্রতিনিধি ছিলেন এবং আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ইসরায়েলের স্বার্থ রক্ষায় সক্রিয় ভূমিকা রাখেন। ১৯৮৮ সালে তিনি লিকুদ পার্টির সদস্য হিসেবে সংসদে প্রবেশ করেন এবং পরবর্তীতে বিভিন্ন মন্ত্রীসভায় গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ব পালন করেন।

প্রধানমন্ত্রী হিসেবে সাফল্য

নেতানিয়াহু প্রথমবার ১৯৯৬ সালে প্রধানমন্ত্রী হন। এরপর বিভিন্ন সময়ে তিনি মোট ১৫ বছরের বেশি সময় এই পদে ছিলেন, যা ইসরায়েলের ইতিহাসে সর্বাধিক। তার সাফল্যের মধ্যে রয়েছে অর্থনৈতিক সংস্কার, প্রযুক্তি খাতে উন্নয়ন, এবং মধ্যপ্রাচ্যের কিছু আরব দেশের সাথে সম্পর্ক স্বাভাবিকীকরণ চুক্তি (Abraham Accords)। তিনি ইসরায়েলের নিরাপত্তা জোরদার এবং প্রতিরক্ষা খাতকে আধুনিকীকরণের জন্যও প্রশংসিত হন।

বিতর্ক ও সমালোচনা

নেতানিয়াহুর নেতৃত্ব প্রায়ই বিতর্কিত হয়েছে। ফিলিস্তিন নীতি নিয়ে তার কঠোর অবস্থান, বসতি স্থাপন সম্প্রসারণ, এবং গাজায় সামরিক অভিযান আন্তর্জাতিক মহলে সমালোচিত হয়েছে। এছাড়াও দুর্নীতি, ঘুষ গ্রহণ ও ক্ষমতার অপব্যবহারের অভিযোগে তার বিরুদ্ধে একাধিক মামলা হয়েছে, যদিও তিনি নিজেকে নির্দোষ দাবি করে আসছেন। তার নেতৃত্বে ইসরায়েলের অভ্যন্তরে রাজনৈতিক বিভাজনও তীব্র হয়েছে।

আন্তর্জাতিক প্রভাব

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাথে নেতানিয়াহুর সম্পর্ক সবসময়ই গুরুত্বপূর্ণ ছিল। ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসনের সময় যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলের সম্পর্ক বিশেষভাবে ঘনিষ্ঠ হয়। ইরান পারমাণবিক চুক্তি (Iran Nuclear Offer) বিরোধিতা করে নেতানিয়াহু আন্তর্জাতিক মহলে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে আসেন। তার নীতি মধ্যপ্রাচ্যের ভূরাজনীতিকে উল্লেখযোগ্যভাবে প্রভাবিত করেছে।

উপসংহার

বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু নিঃসন্দেহে ইসরায়েলি রাজনীতির এক শক্তিশালী ও দীর্ঘস্থায়ী চরিত্র। তার নেতৃত্বে ইসরায়েল বহু গুরুত্বপূর্ণ সাফল্য অর্জন করেছে, তবে একই সাথে তীব্র সমালোচনার মুখেও পড়েছে। সমর্থক হোক বা সমালোচক, নেতানিয়াহুর প্রভাব আগামী অনেক বছর ইসরায়েল এবং মধ্যপ্রাচ্যের রাজনীতিতে অনুভূত হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *